ভালুকা প্রতিনিধি ঃ
সৌদি খেজুর আবাদে বাজিমাত ভালুকার খেজুর মোতালেবের, বছরে আয় অর্ধ কোটি টাকা,
নিজের বাগানে উৎপাদিত সৌদি খেজুর ও চারা বিক্রি করে বছরে আয় অর্ধকোটি টাকা, খেজুর বাগান সম্প্রসারিত হয়েছে ১৪ একরে,৭ একর বাগান সৃজন করা হয়েছে খেজুরের রস ও গুড় উৎপাদনের জন্য। আগামী শীত মৌসুমে ২ শতাধিক গাছ থেকে রস বের করে গুড় উৎপাদনে যাবেন বলে জানিয়েছেন মোতালেব। ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ী ইউনিয়নের পাড়াগাঁও গ্রামের আব্দুল মোতালেব ওরফে খেজুর মোতালেব ১৯৯৮ সালে সৌদি আরবে যান। সেখানে তিনি খেজুর বাগান পরিচর্যার কাজ পান। বছর তিনেক সেখানে কাজ করেন। কিন্তু এই কাজ থেকে যে মজুরি পেতেন তাতে মোতালেব বুঝলেন এভাবে আরেক জনের বাগানে মজুরের কাজ করে ভাগ্যের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সম্ভব নয়। অনেকটা খেপাটে স্বভাবের মোতালেব ভাবলেন দেশে ফিরে মরুভূমির খেজুর নিজের জমিতে চাষ করার চেষ্টা করলে মন্দ কি। যেই চিন্তা, সেই কাজ। ২০০১ সালের শেষ দিকে সৌদি আরব থেকে ৩৫ কেজি খেজুরের বীজ নিয়ে দেশে ফেরেন মোতালেব। শুরু করেন খেজুর বাগান তৈরির কাজ শুরু করেন।
বর্তমানে মোতালেবের সাত বিঘা বাগানে ৩ হাজারের বেশি খেজুরগাছ আছে। তার বাগানে সৌদি আরবের আজোয়া, শুক্কারি, আম্বার, লিপজেল ও মরিয়ম জাতের খেজুর থোকায় থোকায় ঝুলছে।
মোতালেব জানান, আজোয়া খেজুর ৩ হাজার টাকা, শুক্কারি ১ হাজার, আম্বার আড়াই হাজার, লিপজেল সাড়ে ৪ হাজার ও মরিয়ম খেজুর ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন তিনি। এছাড়া বিক্রি হয় খেজুরের চারাও। কাটিং করা প্রতিটি চারা ১৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এছাড়া বীজ থেকে তৈরি চারা ৫০০ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেন।
আবদুল মোতালেব বলেন, ‘২০০১ সালে বাড়িতে আসার সময় ৩৫ কেজি বীজ নিয়ে আসি, সেখান থেকে মাত্র ২৭৫টি গাছ তৈরি করা হয়। দীর্ঘ ১৮ বছর গবেষণা করে সাতটি মাতৃগাছ পাই, বাকিগুলো সব পুরুষ গাছ। পুরুষ গাছগুলো কেটে মাতৃগাছগুলো থেকে কাটিং করে চারা উৎপাদন শুরু করি।’ গর্বিত মোতালেব বলেন, আল্লাহর রহমতে আমার সন্তানদের আর কষ্ট করতে হবে না। আমাদের বাগানে উৎপাদিত খেজুর পুরোপুরি সৌদি আরবের সঙ্গে স্বাদে-গন্ধে মেলে।’ তিনি আরো বলেন, প্রক্রিয়াজাতকরণের মেশিনের অভাবে সৌদি আরবের মত খেজুর প্যাকেটজাত করতে পারছেন না। প্রক্রিয়াজাতকরণের একটি মেশিন হলে সৌদি আরবের মতোই সারা দেশে খেজুর সরবরাহ করতে পারবেন।
বাবার পাশাপাশি মোতালেবের ছেলে মিজানুর রহমানও পড়ালেখার পাশাপাশি খেজুরবাগান নিয়ে কাজ করছেন। দেশি ও বিদেশি জাতের চারা ক্রস করে রসের জন্য ৭ একট জমিতে প্রায় ৮ হাজার গাছ নিয়ে নতুন করে আরো একটি বাগান করেছেন বাবা-ছেলে। এর মাধ্যমে খেজুরের খাটি রস ও গুড় উৎপাদন করার কথা জানিয়েছেন।
অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান বলেন, ‘২০২৩ সাল থেকে বাবার সঙ্গে খেজুরবাগানে কাজ শুরু করি। আমি খেজুরগাছে কাটিং করে নতুন চারা উৎপাদন কৌশল শিখেছি। এছাড়া দেশি ও সৌদি খেজুরগাছ ক্রস করে একটি জাত উদ্ভাবন করেছি, যেটি থেকে প্রচুর রস উৎপাদন সম্ভব।’
তারাকান্দা থেকে খেজুর বাগান দেখতে আসা মোঃ ফয়জুর রহমান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকবার দেখেছি মোতালেবের সৌদি খেজুর বাগান। আমার একটি মাদরাসা রয়েছে মাদরাসার পাশে কয়েকটি খেজুর গাছ লাগানের ইচ্ছা আছে। খেজুর গাছের দাম জেনে গেলাম। সৌদি খেজুরের গাছ দেখে অবাক হলাম। থোকায় কি সুন্দর খেজুর ধরে রয়েছে।
অপর দর্শনার্থী শরীফ উল্লাহ সবুজ জানান, একটি বেসরকারী কোম্পানীতে ম্যানেজার হিসাবে চাকরী করে। তার দেশের বাড়ীতে তিন কাঠা জমিতে খেজুর গাছ লাগানোর জন্য পরামর্শ নিয়ে গেলেন। আঃ মোতালেবের সৌদি খেজুর বাগানে খেজুর খেয়ে পরখ করেছি বেশ মিষ্টি।
ভালুকা উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ‘কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে আমরা এমন উদ্যোক্তাদের নিয়মিতভাবে পরামর্শ দিয়ে থাকি। তবে সরকারি নির্দেশনা না থাকায় সরাসরি কোনো প্রকল্পের মাধ্যমে খেজুরবাগানে আমরা কোনো সহযোগিতা দিতে পারি না। সরকারিভাবে খেজুর প্রকল্প নিয়ে কৃষকদের প্রণোদনার আওতায় নিয়ে এলে তারা উপকৃত হবেন এবং আবাদ বৃদ্ধি পাবে।