
পিরোজপুর প্রতিনিধি ঃ
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের পিরোজপুর ও ঝালকাঠির সীমান্তবর্তী ২৫টিরও বেশি গ্রাম নিয়ে গড়ে উঠেছে পেয়ারার সাম্রাজ্য। প্রায় ৩০ হাজার একর জমিতে চাষ হচ্ছে দেশি জাতের পেয়ারা। এই চাষের সঙ্গে জড়িত অন্তত ২০ হাজার পরিবার—তাঁদের অনেকের জীবন-জীবিকা নির্ভর করে এই মৌসুমি ফলের উপর। রংতুলির মতো ছড়িয়ে থাকা খালপথ, শিরার মতো বিস্তৃত নৌযাত্রা আর থেমে থেমে ভেসে ওঠা পেয়ারা, পিরোজপুরের নেছারাবাদর আটঘর-কুড়িয়ানা অঞ্চলের এমন বৈচিত্রময় দৃশ্য মানুষকে মুগ্ধ করে রেখেছে। কৃষিকে কেন্দ্র করে উদ্ভাবনী উদ্যোগের দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছেন এসব এলাকার বাসিন্দারা। বর্ষায় প্রাণ ফিরে পেয়েছে নেছারাবাদের আটঘর-কুড়িয়ানা আর ঝালকাঠির ভীমরুলীর ভাসমান বাজার।
বিশাল বিস্তৃত খালে বসেছে এক স্বপ্নের হাট- দেশের সবচেয়ে বড় ভাসমান পেয়ারা বাজার। ভোরের আলো ফোটার আগেই সারি সারি কোষা নৌকায় করে আসতে থাকেন চাষিরা- তাঁদের সংগ্রহ করা পেয়ারা, আর ঘামের গন্ধমাখা আশা নিয়ে।
ভাসমান বাজার মানেই শুধু বেচাকেনা নয়, এটা এক ধরণের জলজ সংস্কৃতি। স্থানীয় চাষিরা বলেন, “এই বাজার আমাদের শিকড়ের মতো। বর্ষায় খালের পানিতে যখন নৌকা ভাসে, তখন যেন আমরা ইতিহাসে ফিরে যাই।বরিশালের বানারীপাড়া, ঝালকাঠি সদর এবং পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি অঞ্চলে প্রতি বর্ষায় শুরু হয় এই ভাসমান হাট। ভীমরুলী, আটঘর-কুড়িয়ানা, শতদশকাঠি, ডুমুরিয়া, আদাকাঠি, কাপুড়াকাঠি—এইসব গ্রামের চাষিরা নৌকায় করে ফল নিয়ে আসেন। বাজার বসে খালেই, দর-কষাকষি চলে পানির ওপর। পাইকারেরা এখান থেকেই সরাসরি কিনে নিয়ে যান দেশের নানা প্রান্তে।কৃষকরা জনান, “এই খাল, এই বাজার আমাদের রক্তে মিশে আছে। পেয়ারা বিক্রি করতে আসা চাষি জানান
সব দুঃসংবাদের মধ্যেও এখানকার কৃষকেরা এখনো আশাবাদী। বর্ষা এলেই ভাসমান বাজার যেন নতুন করে তাঁদের বাঁচার প্রেরণা দেয়। শত বছরের কৃষি ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে তাঁরা এখন নবচিন্তার পথে হাঁটছেন—মিশ্র চাষ, নতুন জাতের ফল, কৃষি পর্যটন। (উপজেলা কৃষি অফিসার) কৃষিবিদ মো: মাহফুজুর রহমান।
এই পেয়ারা বাগান শুধু একটি ফসলের উৎস নয়—এটি জীবনের সঙ্গে জড়িত এক নদীর ধারা, যা ভাসমান বাজার হয়ে আমাদের বলে যায়।
অসংখ্য মানুষের জীবিকা নির্বাহ হয় এই পেয়ারা বিক্রির মাধ্যমে। বছরে প্রায় ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা বিক্রি হয় এই পেয়ারা। (নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: জাহিদুল ইসলাম) এই পেয়ারা চাষের ইতিহাস প্রায় দুই শতাব্দী পুরোনো। তবে গরম, অনাবৃষ্টি আর সংরক্ষণের সমস্যায় পড়ে অনেকেই পেয়ারা চাষের পাশাপাশি বেছে নিচ্ছেন আমড়া, মাল্টা, লেবু ও সবজি চাষ। এ অঞ্চলের গ্রামীণ জীবন জুড়ে নৌকা শুধু বাহন নয়—এটি তাঁদের জীবনেরই অংশ। প্রতিটি বাড়িতে একাধিক কোষা নৌকা। বাগানে যাওয়া, বাজারে যাওয়া, এমনকি বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতেও এই নৌকার ওপরই ভরসা।