দিনাজপুর প্রতিনিধি,
সেতাবগঞ্জ চিনিকল ও শ্যামপুর চিনিকল চালুর জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ অবিলম্বে ছাড় ও দ্রুত সংস্কার কাজ এবং পরবর্তী ধাপে বন্ধ চারটি চিনিকলের দ্রুত সংস্কার কাজ চালুর দাবিতে আন্দোলন করে সেতাবগঞ্জ চিনিকল পুনঃচালনা আন্দোলন পরিষদ। তারা স্বারকলিপি প্রদান ও সমাবেশ কর্মসূচি পালন করে।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১১টায় দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার সেতাবগঞ্জ চিনিকলের মুলফটকে সেতাবগঞ্জ চিনিকল পুনঃচালনা আন্দোলন পরিষদের আয়োজনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সমাবেশ শেষে নেতৃবৃন্দ সেতাবগঞ্জ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কৃষিবিদ আবুল বাশারের মাধ্যমে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের চেয়ারম্যানের বরাবর স্বারকলিপি প্রদান করেন।
সমাবেশে সেতাবগঞ্জ চিনিকল পুনঃচালনা আন্দোলন পরিষদের আহবায়ক বদরুদ্দোজা (বাপন) সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের জীবন্ত কিংবদন্তি জাতীয় কৃষক খেতমজুর সমিতির সভাপতি ও জাতীয় গণফ্রন্টের সমন্বয়ক প্রবীণ কৃষক নেতা কমরেড টিপু বিশ্বাস।
সেতাবগঞ্জ চিনিকল পুনঃচালনা আন্দোলন পরিষদের সদস্য সচিব সোহাগ হোসেনের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় কৃষক খেতমজুর সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান।
এছাড়াও বক্তব্য রাখেন বন্ধ চিনিকল চালুকরণ টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য কামরুজ্জামান ফিরোজ, বোচাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা রেদওয়ানুল কারীম রাবিদ,ছাত্র নেতা ফাহাদ চৌধুরী ও মোহাম্মদ ফারদিন হাসিম প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, বিগত পতিত স্বৈরাচারী সরকারের রাষ্ট্রীয় শিল্প ধ্বংসের নীতির ফলশ্রুতিতে ২০২০ সালের ১ ডিসেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ছয়টি চালু চিনিকল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তারা আরও বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর জাতীয় শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদ ও সেতাবগঞ্জ চিনিকল পুনঃচালনা আন্দোলন পরিষদ বন্ধ চিনিকলগুলো পুনরায় চালুর দাবি জানায়। গঠিত টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা প্রতি বছর দুটি করে পর্যায়ক্রমে ছয়টি চিনিকল চালুর অনুমোদন দেন এবং সেই অনুযায়ী বাজেটও গৃহীত হয়। কিন্তু প্রথম ধাপে সেতাবগঞ্জ চিনিকলের জন্য ৮ কোটি ২৩ লক্ষ টাকা এবং শ্যামপুর চিনিকলের জন্য ৫ কোটি ১৬ লক্ষ টাকা ২০২৫- ২০২৬ অর্থবছরে ছাড়ের কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত অর্থ মন্ত্রণালয় তা ছাড় করেনি।
বক্তাদের অভিযোগ, সেপ্টেম্বর থেকে আখ চাষের মৌসুম শুরু হলেও সংশ্লিষ্ট চিনিকলগুলো এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেয়নি। স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার ও এলাকার কিছু প্রভাবশালী সাংসদের চক্রান্তে চিনিকলগুলোর বিপুল সম্পদ লুণ্ঠন ও দখলের উদ্দেশ্যে সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
তারা বলেন,আখচাষী ও চিনিকল শ্রমিকদের দীর্ঘ চার বছরের আন্দোলনের ফলেই অন্তর্বতীকালীন সরকার চিনিকলগুলো পুনরায় চালুর সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু বরাদ্দকৃত বাজেট ছাড় না হওয়ায় আখচাষীরা আবারও হতাশায় পড়েছেন।
বক্তারা অবিলম্বে সেতাবগঞ্জ ও শ্যামপুর চিনিকলের বরাদ্দকৃত অর্থ ছাড় দিয়ে সংস্কার কাজ শুরু এবং চিনিকল পুনঃচালুর দাবি জানান, যাতে এ অঞ্চলের ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার হয় ও নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। আগামী এক সপ্তাহ মধ্যে অর্থ বরাদ্দ ছাড় না হলে সেতাবগ চিনিকলের সকল কার্যক্রম বন্ধ হবে। সেতাবগ চিনিকলে আবার তালা ঝুলা হবে। এই চিনিকলের জমি থেকে ১৪ থেকে ১৫ কোটি টাকা আয় হয়। এই আয়েে টাকা চেয়ারম্যান হেড অফিসে নিয়ে যায়। এই টাকা দিয়ে বাকী মিলগুলো চালায়। অত্র অঞ্চলের দিনাজপুরের কুষক শ্রমিক আখচাষী আকাশের দিকে চেয়ে থাকে চাঁদ উঠবে।এটা লজ্জা লজ্জা।
সেতাবগঞ্জ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কৃষিবিদ আবুল বাশার বলেন, আমি স্মারকলিপি পেয়েছি। এটি আমি মাননীয় চেয়ারম্যান মহোদয়ের কাছে পৌঁছে দেব। এই দাবির সঙ্গে আমিও একমত। এই চিনিকল বন্ধ হওয়ার পর এখানকার অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা খুবই খারাপ হয়েছে। এলাকার বহু মানুষের রুজি-রোজগারের বিষয়টি এ কলের সঙ্গে জড়িত ছিল। মিল বন্ধ হওয়ার পর তাদের আর্থিক অবস্থা ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।