শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি ঃ
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল ভাড়াউড়া চা বাগানে পরিবেশ রক্ষায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন চা শ্রমিক বিষ্ণু হাজরা। দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে যেকোনো জন্ম, মৃত্যু বা সামাজিক অনুষ্ঠানে তিনি একটিই উপহার দিয়ে আসছেন—একটি গাছের চারা।
হাজরা শ্রীমঙ্গলের ভাড়াউড়া চা–বাগানের বাসিন্দা। তিনি পেশায় চা–শ্রমিক। চা–বাগানে কাজের পাশাপাশি সেখানে ঝালমুড়িও বিক্রি করেন। তাঁর পরিবারে মা-বাবা, স্ত্রী ও দুই ছেলে রয়েছে।
স্থানীয় মন্দির মহা হাজরা চকিদার বলেন, "গাছ আমাদের পরিবেশ রক্ষা করে, আমাদের ধর্মীয় উপাসনালয়গুলো যেমন মন্দির-মসজিদ রক্ষা করতেও এটি সহায়ক। আজ আমরা বিষ্ণু হাজরা দার মাধ্যমে মন্দির প্রাঙ্গণে গাছ রোপণ করেছি।
গ্রাম উন্নয়ন কার্যক্রম (গাউক)-এর আঞ্চলিক ম্যানেজার মহাদেব ভূইয়া জানান, বৃক্ষপ্রেমিক এই মানুষটিকে আমরা ২৮ বছর ধরে দেখছি।
তিনি বলেন , আমাদের বিষ্ণু হাজরা দা জম্ম, মৃত্যু , বা যেকোন অনুষ্ঠানে গেলে কিছু দেন বা না দেন একটি গাছ উপহার দেন। আমাদের গ্রাহক এমডি স্যার অশোক পাল জানেন উনি বৃক্ষ প্রেমিক মানুষ ।
উনি প্রকৃত অর্থেই একজন পরিবেশ-সচেতন নাগরিক।
চা শ্রমিক সুমন হাজরা বলেন, "রাস্তার পাশে, শ্মশানের চারপাশ—সবখানে তিনি গাছ লাগিয়েছেন। তিনি সবসময় বলেন, ‘গাছ লাগান, পরিবেশ বাঁচান।’ অক্সিজেন আসে গাছ থেকে, আর আমরা বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইড ছেড়ে দিই—গাছই সেটা শোষণ করে পরিবেশ রক্ষা করে।
বিষ্ণু বলেন, ১৯৯৪ সালে ষষ্ঠ শ্রেণিতে শহরের ভিক্টোরিয়া উচ্চবিদ্যালয়ে ভর্তি হই। আমাদের চা–শ্রমিক পরিবারে অভাব–অনটন লেগেই থাকত। তখন পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনিও করতাম। একদিন মাথায় এলো—যদি কিছু গাছের চারা লাগাই, সেই চারা বড় হলে অনেক টাকায় বেচতে পারব, অর্থকষ্ট কমবে। ১৯৯৭ সালে আমি নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বৃক্ষ’ কবিতাটি পড়ি। সেই কবিতা থেকে বেশ অনুপ্রাণিত হই, গাছের অনেক উপকারিতার কথা জানতে পারি। তখন থেকে টিউশনির টাকার একটি অংশ দিয়ে টুকটাক গাছ লাগানো শুরু করি।
তিনি আরো বলেন , বাগানে কিছু যুবকদের কাছ থেকে প্রথমে পাঁচশত টাকা চাঁদা তুলি. পরে পরিকল্পনা করে গাছে চারা কিনি। অমুক বাগানে চারা রোপণ করমু। আমাদের গ্রাম উন্নায়ন গ্রাউক যে সংগঠন টি রয়েছে , ইতিমধ্যেই আমরা বিভিন্ন বাগান পাঁচহাজার উপরে চারা রোপণ করেছি ।
বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে ভাড়াউড়া চা বাগানে বিষ্ণু হাজরা যেন এক নিঃশব্দ বিপ্লব চালিয়ে যাচ্ছেন, যার প্রভাব ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বিশাল আশীর্বাদ হয়ে থাকবে।