বরিশাল প্রতিনিধি ঃ
পুত্রবধূ হয়ে শ্বশুর বাড়িতে এসেছিলেন সবীতা রাণী। তখনও দেখেছেন আড়িয়াল খাঁ নদীর ভাঙন। এখন নাতি-নাতনিরাও দেখছেন ভাঙনের তীব্রতা। মাঝখানে কয়েক যুগে রাক্ষুসে আড়িয়াল খাঁ নদী গিলে খেয়েছে শত শত বাড়ি-ঘর, ফসলি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা।
বলছি, বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদীর তীরবর্তী রহমতপুর ইউনিয়নের ছোট মীরগঞ্জ, লোহালিয়া, চাঁদপাশা ইউনিয়নের রফিয়াদী গ্রামের কথা। যেখানে যুগযুগ ধরে আড়িয়াল খাঁ নদীর ভাঙন অব্যাহত থাকলেও ভাঙন রোধে নেই দৃশ্যমাণ কার্যক্রম।
ভাঙন রোধে সরকারের কার্যকরী উদ্যোগ না থাকায় বাবুগঞ্জ উপজেলার নদী তীরবর্তী গ্রামগুলো জনশূণ্য হয়ে যাচ্ছে। ভিটা-মাটি হারিয়ে পথে বসছে গ্রামের মানুষ। একসময় জমিজমা, অর্থ-সম্পদে স্বয়ংসম্পূর্ণ মানুষগুলোর দিন কাটছে অন্যের আশ্রয়ে।
নদী ভাঙন এলাকার মানুষের দাবি- প্রায় ৪০ বছর ধরে চলছে আড়িয়াল খাঁ এবং পার্শ্ববর্তী সন্ধ্যা ও সুগন্ধ্যা নদীর ভাঙন। যার ধারাবাহিকতা এখনো চলছে। সম্প্রতি বর্ষা মৌসুমের শুরুতে ভাঙনের তীব্রতা আরও বেড়ে যায়। গত দুই মাসে উপজেলার ছোট মীরগঞ্জ, লোহালিয়া, রফিয়াদি, কেদারপুর, জাহাঙ্গীরনগর, দেহেরগতি এবং পার্শ্ববর্তী উজিরপুর উপজেলার দোয়ারিকা-শিকারপুর এলাকায়র অসংখ্য বসতঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ফসলি জমি এবং গাছপালা বিলিন হয়েছে নদী গর্ভে।
সম্প্রতি গভীর রাতে আকস্মীক ভাঙনে সন্ধ্যা নদীর গর্ভে হারিয়ে গেছে বাবুগঞ্জের জাহাঙ্গীর নগর ইউনিয়নের দক্ষিণ চর হোগল পাতিয়া গ্রামের মজিদ বেপারী, আজিদ বেপারী, সালেক বেপারী ও বারেক বেপারীর বসতঘর। এখন ভাঙন চলছে আড়িয়াল খাঁ নদীর তীরবর্তী ছোট মীরগঞ্জে। নদীর তীর মানুষেরা তাদের বসতঘর, গাছপালা কেটে নিচ্ছে।
ঝুঁকিতে রয়েছে অসংখ্য বসতঘর, ফসলি জমি, গাছপালা, রাস্তাঘাট, মসজিদ-মাদ্রাসা এবং একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঝুঁকিতে রয়েছে। অথচ ভাঙন রোধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না পানি উন্নয়ন বোর্ড। এখন ত্রাণ বা সহযোগীতা নয়, গ্রামবাসির দাবি ভাঙন রোধে টেকসই বেড়িবাঁধ।
ইতোপূর্বে মীরগঞ্জ ফেরিঘাট থেকে লোহালিয়া গ্রাম হয়ে চাঁদপাশা পর্যন্ত আড়িয়াল খাঁ নদীর তীরে বেরিবাঁধ ছিল। গত ১০ বছরে বেড়িবাঁধ ভেঙে নদীতে মিশে গেছে। নদীর তীরে বিশাল এক সাঁকো বানিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে স্থানীয়দের। স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থী এবং বয়স্ক মানুষ সাঁকো দিয়ে চলতে গিয়ে প্রায়শই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। গ্রামের কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে জেলে নৌকা ছাড়া মিলছে না অন্য কোনো বাহন।সন্ধ্যা, সুগন্ধা এবং আড়িয়াল খাঁ নদীর ভাঙন রোধে উদ্যোগ নেয়ার কথা জানিয়েছেন বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাবুগঞ্জ উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মুশফিকুর রহমান শুভ। তিনি জানিয়েছেন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পেলে পরবর্তী উদ্যোগ নেয়ার কথা জানান তিনি।